বার্ড ফ্লু : আতঙ্ক নয়, সচেতনতা চাই

বার্ড ফ্লু কি ও কেন?
ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাস সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত । এর ৩ টি ধরন বা প্রকৃত (টাইপ) আছে । এগুলো হচ্ছে A, B এবং C । A টাইপের ভাইরাস আমাদের প্রকৃতিতে ছড়িয়ে আছে । উড়ন্ত পাখী, হাঁস-মুরগি, ঘোড়া , শুকুর, বিড়াল ও মানুষে ভাইরাস A বা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা শনাক্ত করা হয়েছে । ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাস B এবং C কেবলই মানুষে পাওয়া যায় । বর্তমানে আমাদের দেশের পোল্ট্রিতে যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে আছে সেটি A শ্রেনীভুক্ত । এ ভাইরাসের দুটো গুরুত্বপূর্ণ এন্টিজেন হচ্ছে – হেমাগ্লুটিনিন এবং নিউরামিনিডেজ । শব্দের আদি অক্ষর এইচ এবং এন দিয়ে এ দুটো এন্টিজেন পবিচিত। এইচ এন্টিজেন পোষক কোষের সাথে ভাইরাসইকে সংযুক্ত করে । অপরদিকে এন এন্টিজেন আক্রান্ত পোষক কোষ থেকে ভাইরাসটিকে অবমুক্ত করে এটিকে বিদ্যমান । এগুলো আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী ঘোষণা করতে হয় । এরুপ ভাইরাস আক্রান্ত মুরগি দ্রুত মারা যায় ।


ইতিহাসে বার্ড ফ্লু
১৮৭৮ সালে ইতালিতে সর্বপ্রথম উচ্চ রোগ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। গত ২০০৩ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারী ২০০৮ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর ৬৬ টি দেশের পোঁল্টিতে এ রোগের প্রাদুভাব নিশ্চিত হয়েছে । তবে স্থান , কাল ও পাএভেদে এ রোগের তীব্রতা বেশি বা কম হয়ে থাকে । খুবই বেশি রোগ উংপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ভাইরাসে H5 বা H7 এন্টিজেন বিদ্যমান । এগুলো আন্তজাতিক নিয়ম অনুযায়ী ঘোষণা করতে হয় । এরুপ ভাইরাসে আক্রান্ত মুরগি দ্রুত মারা যায় ।

বিশ্ব ব্যাপী বার্ড ফ্লু
১৯৫৯ সাল থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার বিস্তার শুরু হয় । প্রথমে ইউরোপ , অস্টেলীয়া ও আমেরিকা এবং পরে এশিয়ারও বিভিন্ন দেশে রোগটি ছড়িয়ে পরে । এ উপমহাদেশে ১৯৯৫ সালে মধ্য পাকিস্তানে এ রোগের প্রাদুভাব ঘটে । সাম্প্রতিককালে এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন – ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম , হং কং, কম্বোডিয়া, কোরিয়া, চীন, রাশিয়া, মালয়েশিয়া এবং জাপানেও এ রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে । তদুপরি , জাপান ছাড়া এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে , রোগটি ফিরে ফিরে আসার খবর পাওয়া গেছে । তাতে প্রায় ২৫ কোটি মুরগি নিহত অথবা নিধন করা হয়েছে ।

বাংলাদেশে বার্ড ফ্লু
বাংলাদেশে এ রোগের ভাইরাস প্রথম শনাক্ত করা হয় ২০০৭ সালের ১৫ মার্চ । বাংলাদেশ প্রানিসম্পদ গবেষনা ইনস্তিটিউটের ল্যাবরেটরিতে কয়েকটি মুরগী থেকে প্রাপ্ত নমুনা আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে এ ভাইরাসের H5 এন্টিজেন সনাক্ত করা হয় । অতঃপর থাইল্যান্ডের একটি ল্যাবরেটরিতে পুনঃপরীক্ষা করে তাতে H5N1 ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্তিত করা হয় । ঐ বছর ১০ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৭ টি জেলার ৫৫ টি খামারে H5N1 এবং ৩ টি খামারে H9N2 এন্টিজেন এর উপস্থিতি নিশ্তিত করা হয় । তবে জুলাই মাস থেকে ডিসেম্বর ২০০৭ পর্যন্ত রোগের প্রাদুভাব হ্রাস পায়।

অন্য কোন কোন প্রজাতি আক্রান্ত হতে পারে : টার্কি , গিনি ফাউল , তোতা পাখী, উট পাখী ও আন্যান্য জলজ / সামুদ্রিক পাখী।

রোগের বিস্তার লাভ
ক) দেশের ভিতরে :
সাধারণত বন্য ও গৃহপালিত পাখি বিশেষ করে পানিতে বসবাস কারী পাখি ও হাঁস এ রোগের ভাইরাসের প্রধান বাহক । দেশী মুরগী হাঁস এবং অন্যান্য পাখি সহ বন্য ও জলজ পাখি খামারের আশে পাশে অবাধে বিচরণ করলে ভাইরাসের বিস্তার ঘটতে পারে । খামারের যন্তপাতি , কর্মচারী বা খামারে আগত লোকজন , খাদ্য সরবরাহের গাড়ী , ভ্যান , রিকসা বা বাতাস প্রভতির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করতে পারে।

খ) দেশের বাহির হতে :
ডিম , জিবন্ত পোল্ট্রিজাত দ্রব্যাদি , খাদ্যেপাদান বা জীবন্ত মুরগি এক দেশ হতে অন্য দেশে আনায়নের মাধ্যমে বিস্তাত লাভ করতে পারে । ভ্রমণশীল পাখি বন্য জলজ পাখি বিশেষ করে বন্য হাঁস যাকে বার্ড ফ্লু ভাইরাসের আধার বলা হয়।

রোগের লক্ষণ :
– ঝাঁকে ঝাঁকে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে,
– আকস্মিক মৃত্যু,
– এলোমেলো পালক ,
– হেমোরেজিক ট্রাকিয়া,
– পা নরম খোসাযুক্ত ডিম,
– ঝিমানি/ কাপুনি,
– হঠাং করে ডিম পাড়া বন্ধ করা,
– মোরগের ঝুঁটি বেগুনি রং ধারন করা,
– মাথা ও চোখের পাতা ও হকে পানি জমা,
– সবুজ রংয়ের পাতলা পায়খানা করা,
– নাক দিয়ে রক্ত মিশ্রিত শ্লেশ্মা নির্গমন ,
– শ্বাস কষ্ট ইত্যাদি ।

রোগ নির্ণয় ও চিকিংসা :
রোগের লক্ষন ও রোগের ইতিহাস যেমন আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার , ক্লিনিক্যাল ও পোষ্ট মটেম চিহ্ন দেখে প্রাথমিক ভাবে এ রোগ সনাক্ত করা যায়। জীবন্ত মুরগি থেকে ক্লোয়াকা , ল্যারিংগস, হতে সোয়াব এবং বিষ্টা সংগ্রহ করে প্ররীক্ষাগারে পাঠায়ে রোগ সনাক্ত করা যায়। মৃত্যু মুরগির ট্রাকিয়া, ফুসফুস, অন্ননালি, প্লিহা, লিভার , কিডনি , হার্ট, ব্রেইন, ইত্যাদি সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠায়ে রোগ সনাক্ত করা যায় । ভাইরাস রোগের সাধারণত চিকিৎসায় সুফল পাওয়া যায় না

References: Bird Flu and Avian Influenza Wikipedia

লেখকঃ ডাঃ মোঃ নাহিদ হাসান

DVM, M.S in Pharmacology (BAU) E-mail: nahiddvm788@gmail.com

এটাও দেখতে পারেন

Antibiotics: Handle with care

World Antibiotic Awareness Week during 13-19 November 2017 is being observed globally with the aim …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.